সুপ্রিয় এসএসসি পরীক্ষার্থীবৃন্দ
এবার ৭টি বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে তোমাদের। সৃজনশীল বিষয় নিয়ে তাই অনেকেই হয়তো দুশ্চিন্তার মধ্যে আছো। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। বরং কিছু বিষয় ভালোভাবে জেনে নিলে দেখবে এ পরীক্ষাগুলোতেই তোমরা সবচেয়ে ভালো নম্বর পেয়েছ। তুমি ইচ্ছা করলেই এবার এই বিষয়গুলোতে অনেক বেশি নম্বর পেতে পারো। তোমরা ইতোমধ্যেই জেনেছ যে, সৃজনশীল পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন কৌশলে আমূল পরিবর্তন এসেছে। কতগুলো নির্ধারিত প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করে পরীক্ষায় পাস করার দিন শেষ হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীর ভালো ফল নির্ভর করবে বিষয় নিয়ে তার নিরন্তর চিন্তা ও লেখার চর্চার ওপর। পূর্ববর্তী পরীক্ষাপদ্ধতিতে প্রশ্নের উত্তরে অপ্রাসঙ্গিক কথা লিখে উত্তর বড় করার বা উত্তরপত্র ভরানোর যে প্রবণতা প্রচলিত ছিল, সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তরে তার কোনো সুযোগ নেই। কেননা ১০ নম্বরে প্রতিটি প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট যে ৪টি ধাপ আছে তার উত্তরেরও সুনির্দিষ্ট ৪টি ধাপ থাকবে। কাজেই সেভাবে প্রস্তুত হয়েই পরীক্ষায় উত্তর লিখতে বসবে। প্রথমেই বলে নিই সৃজনশীল প্রশ্নের (আগের রচনামূলক/Subjective অংশের) উত্তর প্রসঙ্গে-
১. সৃজনশীল পদ্ধতিতে সিলেবাস অন্তর্ভুক্ত তোমার পাঠ্যসূচির কোন গদ্য/কবিতা/উপন্যাস/নাটকের শিখনফলের আলোকে একটি মৌলিক উদ্দীপক এবং সংশ্লিষ্ট চারটি প্রশ্ন থাকবে। যে গদ্য/কবিতার আলোকে উদ্দীপক তৈরি করা হয়েছে, সেই গদ্য/কবিতা থেকেই থাকবে জ্ঞান এবং অনুধাবনমূলক প্রশ্ন। প্রশ্ন দুটির উত্তর উদ্দীপকে থেকে না হয়ে সরাসরি পাঠ্য বই থেকে করতে হবে। প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্ন হবে উদ্দীপকের আলোকে।
২. সৃজনশীল অংশে মোট নয়টি প্রশ্ন থাকবে। তোমাকে উত্তর লিখতে হবে মোট ছয়টি প্রশ্নের। উত্তরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- কোনোক্রমেই একটি প্রশ্নের (জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতাসহ পূর্ণাঙ্গ প্রশ্ন) উত্তর লেখার ক্ষেত্রে ১৮ মিনিটের বেশি সময় নিলে তুমি বাকি প্রশ্নের উত্তর শেষ করতে পারবে না। তাই ১৮ মিনিটের মধ্যেই যেন এক একটি প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ করতে পারো সেদিকে নজর রাখবে বিশেষভাবে।
৩. এ পদ্ধতিতে একটি প্রশ্নের চারটি অংশ (জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা) তাই প্রত্যেক অংশের উত্তর লেখার সময় প্রতিবার আলাদা করে নম্বরটা লিখবে। যেমন : ৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর করতে হলে- ৬ নম্বর প্রশ্নের ক এর উত্তর, ৬ নম্বর প্রশ্নের খ এর উত্তর, ৬ নম্বর প্রশ্নের গ এর উত্তর এবং ৬ নম্বর প্রশ্নের ঘ এর উত্তর এভাবে লিখলে ভালো। আর এ লেখাগুলো আলাদা রঙের (সবুজ/নীল) কালি দিয়ে লিখলে দেখতে আরো সুন্দর লাগবে। কিংবা মার্কার (সবুজ/নীল কালির) দিয়ে আন্ডারলাইনও টানতে পারো।
৪. যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর লেখা শুরু করলে তার চারটি অংশেরই ধারাবাহিকভাবে উত্তর লিখতে হবে। একটি প্রশ্নের জ্ঞানের উত্তর আরেক প্রশ্নের প্রয়োগের উত্তর এভাবে লেখা যাবে না। কোনো উত্তর যদি কেউ না পারো, সে ক্ষেত্রে সেটা বাদ দিয়ে তার পরের অংশের উত্তর লিখতে হবে।
৫. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের নম্বর এক। এ প্রশ্নের উত্তর হবে To the point, যা সঠিকভাবে লিখলে বরাদ্দকৃত ১ নম্বরের মধ্যে ১ নম্বরই পাওয়া যাবে। এ উত্তরটি পাঠ্যপুস্তক থেকে হুবুহু লেখার সুযোগ থাকবে। অর্থাৎ এটি মুখস্তনির্ভর উত্তর। এর উত্তর একটি শব্দে একাদিক শব্দে বা একটি বাক্যে দেওয়া যাবে। তবে উত্তরটি একটি বাক্যে হলেই ভালো হয়। মনে রাখতে হবে, জ্ঞানমূলক প্রশ্নে যে তথ্যটা জানতে চাওয়া হয়েছে সেটার বানান ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে এবং শূন্য পাবে। যেমন- স্বাধীনতা তুমি’ কবিতার রচয়িতা কে? এখানে শামসুর রাহমান’ এর নামের বানানটি ভুল করলে উত্তর কাটা যাবে। আবার মকবুল বুড়োর মেয়ের নাম কী? এখানে হীরন’ বানানটি ভুল করলেই শূন্য পাবে।
৬. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের নম্বর দুই। এ উত্তরের জন্যেও কিছু তথ্য মুখস্থ রাখতে হবে। তবে পাঠ্যপুস্তক ভালো করে পড়া না থাকলে অনুধাবন স্তরের প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন হবে। অনুধাবনমূলক প্রশ্নের দুই নম্বরের মধ্যে এক নম্বর জ্ঞানের জন্য, আরেকটি অনুধাবনের জন্য। তুমি ইচ্ছা করলে জ্ঞান অংশের উত্তর আগে অনুধাবনমূলক উত্তর পারে অথবা অনুধাবনমূলকের উত্তর আগে জ্ঞানমূলকের উত্তর পারে লিখতে পার। সতর্ক থাকতে হবে, মাত্র ২ নম্বরের উত্তরের অপ্রাসঙ্গিক কোনো বিষয়ের অবতারণা যেন করা না হয়। শুধু অনুধাবনেই নয়, কোনোক্রমে কোনো প্রশ্নের উত্তরে অপ্রাসঙ্গিক কথা, অপ্রয়োজনীয় তথ্য দেবে না।
৭. প্রয়োগমূলক প্রশ্নের মোট নম্বর তিন। এক নম্বর জ্ঞানে, এক নম্বর অনুধাবনে এবং এক নম্বর প্রয়োগে। তুমি প্রয়োজন অনুসারে প্রশ্নের উত্তরের আগে বা পরে যে কোনো জায়গাতেই জ্ঞান, অনুধাবন আর প্রয়োগের ব্যবহার করতে পারো। প্রয়োজন অনুসারে প্যারাও ব্যবহার করতে পারো, প্রয়োজন মনে না করলে নাও করতে পারো। এক প্যারাতে সবগুলো তথ্য দিয়ে উত্তর লিখলে হবে। তবে দুই অথবা তিন প্যারা করতে পারো। প্রয়োগমূলক প্রশ্নে শিক্ষার্থী তার পাঠ্যবই থেকে যা জেনেছে এবং যা বুঝেছে, তা নতুন ক্ষেত্রে অর্থাৎ উদ্দীপকে প্রয়োগ করবে। কাজেই উদ্দীপকটি যে শিখনফলের আলোকে তৈরি করা হয়েছে অর্থাৎ উদ্দীপকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গদ্য/কবিতার যে দিকটির সাদৃশ্য/বৈসাদৃশ্য থাকে সেটাই জ্ঞান। এই দিকটি একটি বাক্যে লিখতে পারলেই এক নম্বর অর্থাৎ জ্ঞানের উত্তর হয়ে গেল। তারপর সেই দিক/প্রসঙ্গটি পাঠ্যবইয়ের আলোকে বর্ণনা করাই হলো অনুধাবন। জ্ঞানসহ এটি লিখতে পারলে পেয়ে যাবে দুই নম্বর এবং সব শেষে ওই দিকটি উদ্দীপকে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা বর্ণনা করাই প্রয়োগ। পূর্ণাঙ্গভাবে উত্তরটি লিখতে পারলেই তুমি পেয়ে যাবে তিন নম্বর।
৮. উচ্চতর দক্ষতামূলক প্রশ্নের মোট নম্বর ৪। এক নম্বর জ্ঞানে, এক নম্বর অনুধাবনে, এক নম্বর প্রয়োগে এবং এক নম্বর উচ্চতর দক্ষতায়। একইভাবে সবগুলো তথ্যের সুসংগঠিত সম্মিলনেই তৈরি হবে উচ্চতর দক্ষতার উত্তর। এ স্তরে এসে তোমাদের বিশ্লেষণী ক্ষমতা, মূল্যায়ন-দক্ষতা ইত্যাদি যাচাই করা হবে; কোনো কিছুর বিবরণ বা বর্ণনা প্রত্যাশা করা হবে না। অধিকন্তু কোনো বিষয়, ভাব, ব্যক্তি বা বস্তুর উপাদানগুলোর অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ তুলে ধরাই এ অংশের উদ্দিষ্ট। উচ্চতর দক্ষতা মানেই একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এ ধরনের প্রশ্নেই সাধারণত একটা অনুসিদ্ধান্ত দেওয়া থাকবে। যদি সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়, তাহলে সেটাকেই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে উদ্দীপকে প্রয়োগ করে প্রমাণ করবে যে সিদ্ধান্তটি সঠিক। আর যদি সিদ্ধান্তটি ভুল হয়, তাহলে কেন ভুল সেটাও প্রমাণ করতে হবে। অনেক সময় সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে উদ্দীপকের সঙ্গে পাঠ্য বইয়ের যে অংশটুকু মিল আছে তা বর্ণনা করে যে যে ক্ষেত্রে মিল নেই সেগুলোও বর্ণনা করতে হবে এবং সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দিতে হবে যে বক্তব্য/সিদ্ধান্তটি আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। বিচার-বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার নামই উচ্চতর দক্ষতা।
৯. শিক্ষার্থীদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, যেন এক অংশের উত্তর অন্য অংশে পুনরাবৃত্ত না হয়। পুনরাবৃত্তি সৃজনশীল প্রশ্নোত্তরের ক্ষেত্রে গ্রহণীয় নয়। তবে উত্তরের অনিবার্য প্রয়োজনে কোনো তথ্য পুনরাবৃত্ত হতে পারে।
0 টি মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন